নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দেদার নাড়া পোড়ানো চলছে : বাড়ছে দূষণ

13th November 2020 7:50 pm বর্ধমান
নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দেদার নাড়া পোড়ানো চলছে : বাড়ছে দূষণ


প্রদীপ চট্টোপাধ‍্যায় ( বর্ধমান ) :  বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়েই চলেছে চাষিরা ।  কৃষি ও পরিবেশ দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই পূর্ব বর্ধমান জেলার সর্বত্র অবাধে  চলছে চাষের জমিতে নাড়া পোড়ানো । এরফলে পরিবেশ দূষণ যেমন মাত্রা ছাড়াচ্ছে তেমনই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জমিতে থাকা উদ্ভিদের খাদ্য উপাদান । এই ঘটনায় রীতিমত উদ্বিগ্ন কৃষি ও পরিবেশ বিদরা  । শীত পড়তে না পড়তেই দূষণের ধোঁয়াসায় ঢাকা পড়ে দেশের রাজধানী শহর দিল্লী । কলকাতাতেও বেড়ে চলেছে  দূষণের মাত্রা । দূষণজনিত এমন পরিস্থিতি  থেকে নিস্কৃতি পাবার জন্য  কৃষি দপ্তর ও পরিবেশ বিদরা জমিতে নাড়া পোড়ানো থেকে চাষীদের বিরত হবার কথা বারে বারে বলে চলেছেন । নাড়া পোড়ানো যে বেআইনি তা নিয়ে জনগনকে  ও ওয়াকিবহাল করতে সরকারী ভাবে প্রচারের কোন খামতি নেই ।  স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাও পথে নেমে  প্রচার চালাচ্ছে । কিন্তু এতসব কিছুর পরেও  জমিতে নাড়া পোড়ানো বন্ধে চাষীর কোন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না । রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলা । এই জেলার চাষিরাই যে শুধু জমিতে নাড়া পোড়াচ্ছেন এমনটা  নয় । অন্য জেলার চাষিরাও  নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে  জমিতেই নাড়া পোড়াচ্ছেন  বলে অভিযোগ । “আবহাওয়া ও পরিবেশ দপ্তরের কর্তারা মনেকরছেন এমনটা চলতে থাকলে দিল্লীর মতো এই বাংলার গ্রামীন এলাকা দূষণের ধোঁয়াসায় ঢাকা পড়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র ।” ‘অনুসন্ধানকারী পরিবেশ বিদরা জানতে পারেন শীত শুরুর প্রক্কালে  দিল্লীর গুরগাঁও সহ পার্শবর্তি এলাকার চাষীরা কম্বাইন হারবেস্টার মেশিনের সাহায্যে জমির ফসল কাটা ও ঝাড়ার কাজ সেরেছেন । ঝাড়াই কাজ শেষে হবার পর ফসলের অপ্রয়োজণীয় অংশ অর্থাৎ ‘নাড়’  জমিতে জড়ো করে তাতে    আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন সেখানকার চাষীরা  ।  ওই নাড়া পোড়ানোর ধোঁয়া শীতের জলিয় বাস্পের সঙ্গে মিশে ধোঁয়াশায় পরিণত হচ্ছে । আর সেই ধোঁয়াশায় সমগ্র দিল্লী শহর ঢাকা পড়ায়  সেখানকার বাসিন্দারা  শ্বাস কষ্টে ভুগছেন । চোখও জ্বলা করছে।” কৃষি দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন , দিল্লীর এমন ঘটনা সামনে আসার  পরেও হুঁশ ফরেনি এই রাজ্যের বিশেষত শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষীদের । বিশ্ব উষ্ণায়ন ও  পরিবেশ দূষণ রোধে হাজারো সচেতনতা প্রচার চালান হলেও  সচেতন হতে চাইছেন না চাষীরা । শীত পড়তেই জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা ও ঝাড়ার কাজ । হারভেস্টার মেশিন দিয়ে আমন ধান গাছ কেটে ধান ঝেড়ে নেবার পর এই জেলার চাষিরাও অবশিষ্ঠাংশ অর্থাৎ ‘নাড়া’  জমিতেই পোড়াচ্ছেন । ‘নাড়া’ পোড়ানো বেআইনি ঘোষনা হওয়া সত্ত্বেও চাষিরা বেপরোয়া ভাবেই জমিতে ‘নাড়া’ পুড়িয়ে যাচ্ছেন । পরিবেশ বিদরা বলছেন, জমিতে ‘নাড়া’ পোড়ানোর রেওয়াজ চাষিরা বন্ধ না করলে আগামীদিনে দিল্লীর পুনরাবৃত্তি  শস্যগোলা সহ গোটা রাজ্যেও ঘটবে  । পরিবেশ বিদরা এমন বার্তা দেবার পর থেকেই  জমিতে নাড়া পোড়ানো বন্ধে লাগাতার সচেতনতা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে জেলার কৃষি দপ্তর । কিন্তু হাজারো সচেতনতা প্রচার সত্ত্বেও  সচেতন হতে চাইছেন না চাষিরা ।জেলার  সর্বত্রই চলছে অবাধে ‘নাড়া’ পোড়ানো । ক্ষেত মজুরি বৃদ্ধি ও  একই সঙ্গে ক্ষেত মজুর সংকটের কারনে হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা ঝাড়ার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে বর্ধমান জেলায় । জামালপুরের চাষি ভক্তি ধারা  বলেন  , ক্ষেত মজুরদিয়ে জমির  ধান গাছ যখন কাটা হয় তখন কাটা ধানগাছ অঁটি বাঁধা অবস্থায় থাকে । ধান ঝাড়ার পর খড়ের অঁটি স্তরে স্তরে সাজিয়ে ‘পালুই’ তৈরি করে তা রাখা হয় । হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা ঝাড়া হওয়ায় সে পরিস্থিতি আর থাকছে না । অজ্ঞ চাষিরা পরিবেশের পাশাপাশি নিজের জমির ক্ষতি করে জমিতেই নাড়া পুড়িয়ে দিচ্ছে ।কলকাতা হাইকোর্টের সিনায়র আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধঋায় বলেন ,‘প্রশাসন জমিতে নাড়া পোড়ানো  বেআইনি ঘোষনা করেছে । কিন্তু আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যারা জমিতে নাড়া পোড়াচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনমাফিক কোন  ব্যবস্থা নিতেই  পারে । জয়দীপ বাবু বলেন ,নাড়া পোড়ানোর ঘটনায়  জড়িতদের  বিরুদ্ধে কৃষি দপ্তর আইনমাফিক কড়া ব্যবস্থা না নিলে আগামীদিনে দিল্লীর পরিণতি এই বাংলাতেও যে ঘটবে তা নিশ্চিৎ ভাবেই বলা যায় ।  ’ রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার  জানালেন ,“জমিতে নাড়া পোড়ালে প্রচুর পরিমানে উদ্ভিদ খাদ্য নষ্ট হয়ে যায় । আমন চাষ মরশুমে খড়ের অবশিষ্ট  অংশ জমিতে পুড়িয়ে না  দিয়ে  জমিতে গর্ত করে সেখানে তা ফেলেদিয়ে  মাটি চাপা দিলে মাটির জৈব কার্বন বৃদ্ধি পাবে । কৃষি জমির উপরিভাগের ৬ ইঞ্চি মাটি সবথেকে মূল্যবান । জমিতে নাড়া পোড়ালে মাটির গঠন ও গুণমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় । জমিতে নাড়া পোড়ালে উপকারি জীবাণু উত্তাপের কারণে ধ্বংস হয়ে যায় । নষ্ট হয়ে যায় জমির গুনগত মান । এমনকি জমি বন্ধা হয়ে যায় । ধানের নাড়া পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর দূষিত গ্যাস নির্গত হয় । যা মনুষের স্বাস্থের পক্ষেও ক্ষতিকর । জমিতে নাড়া পোড়ানোর সময় আগুনের ফুলকি উড়ে পাশের জমিতে থাকা চাষির পাকা ধানও পুড়ে ভস্মিভূত হয়েযাবার  সম্ভাবনা পুরোমাত্রায় থাকে । প্রদীপ মজুমদার  জানান, হারভেস্টার মেশিনে ধান ঝাড়ার পর খড়ের অবশিষ্ট অংশ কমপোস্ট বা ডার্বি কমপোস্ট সার তৈরির কাজে লাগালে চাষীরা যেমন উপকৃত হবেন তেমনই দূষণ থেকেও রাজ্যবসি রক্ষা পাবেন ।”

 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।